স্বাস্থ্য

স্কুল থেকেই সিপিআর শেখা বাধ্যতামূলক করার দাবি

নিউজ ডেস্ক

শেয়ারঃ

main

সংগৃহীত

দেশে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে (হৃদ্‌যন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া) মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রথম পাঁচ মিনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টায় আশপাশের সাধারণ মানুষ যদি সিপিআর দিতে পারেন, তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তাই সবাই যেন জরুরি মুহূর্তে ‘প্রথম পাঁচ মিনিটের ডাক্তার’ হয়ে উঠতে পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।


মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি সম্প্রতি দুজন পোলিং অফিসারের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কয়েকদিন আগে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তারা মারা যান। আশপাশে সহকর্মীরা থাকলেও সিপিআর কেউ দিতে জানতেন না। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হার্ট অ্যাটাক ধীরে ধীরে সময় দেয়, কিন্তু কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিদ্যুতের মতো—এক মুহূর্তেই সব বন্ধ হয়ে যায়। তখন পাশে থাকা স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা সহকর্মীকেই ডাক্তার হয়ে উঠতে হয়।


অধ্যাপক মহসীন ব্যাখ্যা করেন, হার্ট অ্যাটাক হয় রক্তনালীতে ব্লক হলে। এতে ব্যথা হয়, কিন্তু রোগী হাসপাতালে যাওয়ার সময় পান। অন্যদিকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলো হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার মতো। তখন হার্ট থেমে যায়, পালস থাকে না, শ্বাস থাকে না। ৯–১০ মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হয়। পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যা পাঁচ মিনিটের মধ্যে জীবন কেড়ে নেয়। তাই সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই।


এই প্রেক্ষাপটে তিনি ‘চেইন অব সারভাইভাল’এর চারটি ধাপ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। প্রথম ধাপ, রোগী শনাক্ত করে সাহায্য চাওয়া। দ্বিতীয় ধাপ, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট নিশ্চিত হলে সিপিআর শুরু করা। তৃতীয় ধাপ, অন্তত ৩০ মিনিট ধরে সিপিআর চালিয়ে যাওয়া বা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া। চতুর্থ ধাপ, হাসপাতালে পৌঁছে উন্নত চিকিৎসা শুরু করা। তার ভাষায়, সিপিআর মানে আসলে হার্টের পাম্পিং কাজটা হাতে করা—চাপ দেওয়া ও ছাড়ার মাধ্যমে ব্লাড সার্কুলেশন চালিয়ে যাওয়া।


অধ্যাপক মহসীন মনে করেন, সাধারণ মানুষ সিপিআর সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার দায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরই নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। এখনই সিপিআর শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে।

তার মতে, স্কুল পাঠ্যক্রমে বিষয়টি যুক্ত করা জরুরি। এজন্য তিনি নবম শ্রেণির বইয়ে দুই পৃষ্ঠা সংযোজনের চেষ্টা করেছিলেন। তার বিশ্বাস, এর ফলে বাংলাদেশে বিশাল পরিবর্তন আসবে। “বিদেশে স্কুলে স্কুলে সিপিআর শেখানো হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ইউটিউব দেখে অনেক কিছু শিখছে। পাঠ্যবইয়ে সিপিআর ঢুকিয়ে দিলে পুরো প্রজন্মই স্মার্ট হয়ে উঠবে, আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পৃথিবীর একমাত্র রোগ, যা পাঁচ মিনিটেই জীবন কেড়ে নেয়। সেই সময়টা আমাদের হাতে। যারা পাশে থাকবে, তারাই রোগীর প্রথম ডাক্তার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। বাংলাদেশেও মৃত্যুর প্রধান কারণ এখন হৃদরোগ। এ অবস্থায় চিকিৎসকদের মতে, প্রতিরোধকেই হতে হবে প্রধান কৌশল।


সম্পর্কিত খবর